December 31, 2017
নতুৃল আলোয় ভরে উঠুক আগামির দিনগুলি: ফিরে পাক মানুষের হারানো অধীকার: শুভ সববর্ষ

আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব-
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব ॥
কত-যে গিরি কত-যে নদী -তীরে
বেড়ালে বহি ছোটো এ বাঁশিটিরে,
কত-যে তান বাজালে ফিরে ফিরে
কাহারে তাহা কব ॥
তোমারি ওই অমৃতপরশে আমার হিয়াখানি
হারালো সীমা বিপুল হরষে, উথলি উঠে বাণী ॥

আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে বসে দেখেছি দিবসের রবি তার শেষ আলোটুকু নিয়ে ডুব দিয়েছে গহিন পানিতে। আজ দুই হাজার সতেরো সালের একত্রিশে ডিসেম্বর আমার বাড়ির পাঁচ তলার বারান্দায় বসে দেখছি তেমনি লালে লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য বিদায় নিচ্ছে এবারের মতো।
মনটা হারিয়ে গেলো পুরনো ভাবনায়, পুরনো দিনে, পুরনো স্মৃতিতে। কত ঘটনা কত কথার ওঠাপড়া জীবন নদীর উজানে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত ছিন্ন কুসুমের ভ্রষ্ট মালার ফুলগুলো কুড়িয়ে এনে দেখছি নানা রঙের কুসুমের খুশবুতে উজ্জ্বল হয়ে আছে তারা। কী পাইনি তার হিসাব মেলাতে মন মোর নহে রাজি, পাওয়ার ভাণ্ডারকেই বারেবারে উল্টে-পাল্টে দেখছি।

আমাদের দৈনন্দিন অসুবিধা বাজার দর যানজট আবহাওয়ার বৈরীভাব পেট্রোলের দাম গ্যাস সঙ্কট সবই তো সহনীয় হয়ে উঠেছিল। এখন কোনো অসহনীয়। কার্তিক অগ্রহায়ণে সোনার ধানে ভরে গেছে মাঠ, কৃষকেরা আনন্দিত, বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। সবুজ পাতার মাঝখানে ছোটো ছোটো ফুলকপি যেন ফুল হয়ে উঠেছে। পাশে তার বন্ধুরা, বাঁধাকপি, রাঙা মুলা, সবুজ শিম, ঝিঙা, গাজর, বিট, চিচিঙ্গা, করলা বেগুন, শালগম, বরবটি, পটোল এবং শাকের রাজ্যে বিরাজ করছে পালং, মুলা, কলমি, পুঁই, সরষে, নাপা, লাউ ও লাল শাক। অবাক হওয়ার মতো কম দামে বিকোচ্ছে কৃষক। অথচ বাজারে আগুন।
আমরা বঙ্গ সন্তানেরা এত দিনে জেনে গেছিÑ মাছ বা গোশতের চেয়ে শাক সবজির পুষ্টিগুণ বেশি। অতএব, কম খরচে ব্যাগ ভর্তি করে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কর্তারা, গিন্নিরা বঁটি পেতে সবজি কাটায় ব্যস্ত।

আমি বসে বসে ভাবছি সেই কৃষক ভাইদের কথা, এত পরিশ্রমে ফলানো ফসলের দাম কমে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ছন্দপতন ঘটেছে। যেকোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা বড়লোকদের তেমন যায় আসে না, অথচ আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানের হাতে পয়সার কমতি দেখে মনটা বিচলিত হয় বটে। তার ছেলেমেয়েরা দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পাঠশালায় যাবে, ভবিষ্যতে ভালো রোজগার করবে এই তো তার চাহিদা। এত সামান্য তবু কেনো অসামান্য হয়ে ওঠে বাজারের এ খামখেয়ালিতে।
বর্ষ শেষে বইপাড়া সরগরম হয়ে ওঠে, পাবলিশিং হাউজে চলে দিন-রাত্রির কাজ, প্রুফ রিডাররা চোখে চশমা এটে কখনো বা সর্ষে ফুল দেখেন। আর তো দেরি নেই বইমেলা শুরু হওয়ার।

যারা প্রচ্ছদ আঁকেন তাদের ব্যস্ততা দেখার মতো। প্রত্যেক লেখকই সবিনয়ে জোড় হাতে দাঁড়িয়ে আছেন কৃপা দৃষ্টি আশায়।
আমরা ভুলে যাবো অতীতের সব গ্লানি-বেদনা-দুঃখ ও মন কষাকষি। নতুন দিনটিকে স্বাগত জানাব নব প্রত্যাশা নিয়ে। আমাদের একমাত্র ভরসা মহান সৃষ্টিকর্তায়, যিনি তার জীবের কোনো প্রার্থনাই ফিরিয়ে দেন না।

আমি বছরে একটি বই প্রকাশ করতে চাই, আমার ভরসা অনন্যা প্রকাশনার মনিরুল হক এবং শিল্পী ধ্রুব এষ। দু’জনেই সন্তানসম ও স্নেহভাজন। জানি শেষ মুহূর্তে ট্রেন ধরতে এলেও তারা ফিরিয়ে দেবেন না। যার সাথে আমার চুয়ান্ন বছরের সংসার সেই প্রবাদ প্রতীম ব্যক্তিটি ইতোমধ্যে ছয়টি বই লিখে ফেলেছেন। প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই আমি। সে কারণেই রবীন্দ্রনাথের চরণ স্মরণ করি

আসমা আব্বাসী

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --